নুহার ক্লাস ওয়ান ভর্তি যুদ্ধে বিজয়ী

 *** নুহার ক্লাস ওয়ান ভর্তি যুদ্ধে বিজয়ী***


দেশের সব সেরা স্কুলগুলোতে বিগত একদশক ধরে লটারির মাধ্যমে ক্লাস ওয়ানে ছাত্র-ছাত্রী নির্বাচন করা হয়। পুরো বিষয়টাই এমন যেন ভাগ্যের জোরে ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া। সেই ভর্তি যুদ্ধে, না, ভাগ্য যুদ্ধে এবার আমরা পড়ে গিয়েছি নুহার জন্যে। রাজধানীর সেরা স্কুল ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভর্তির আবেদন গত ২০ ডিসেম্বর, ২০২০ থেকে শুরু হয়ে ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০ এ শেষ হয়।

কোনো রকম কষ্ট ছাড়া ঘরে বসে থেকে প্রথম দিনেই আবেদনের কার্যক্রম শেষ করলেও আবেদনের হার্ডকপি জমা দিতে হয়েছিল বিশাল এক লাইনে দাঁড়িয়ে। আমি ভেবেছিলাম এবার বোধ হয় আবেদন কম হবে। কিন্তু ২৯ ডিসেম্বরে যখন ফরম জমা দিতে গিয়ে দেখলাম এই করোনা মহামারীতেও আমার সামনে মিনিমাম ১০০ জন দাঁড়িয়ে আছে তখন আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো। নুহাকে ক্যাচমেন্ট কোটা থেকে আবেদন করিয়ে ছিলাম। কিন্তু ক্যাচমেন্ট কোটার জন্যে নকশার আর শেষ নাই, প্রমাণ স্বরূপ বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র, বিদ্যুৎ বিলের কপি এই সেই আবেদনের সাথে সাবমিট করতে হবে। তো শেষ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক করে আবেদন সাবমিট করে এলাম। এবার অপেক্ষার পালা যে প্রাথমিক বাছাইয়ে নুহার আবেদন নির্বাচিত হয় কিনা! আমার তো আর কিছু করেই শান্তি লাগে না এই ভেবে যে ভিকারুননিসা একটু এদিক থেকে সেদিক ছল খুঁজে আবার আবেদনটা বাতিল করে দেবে না তো?! গত ৬ জানুয়ারি, ২০২১-এ প্রাথমিক নির্বাচনের রেজাল্ট প্রকাশিত হয়। কিন্তু যখন দিন শেষ হয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায় তবু স্কুল থেকে ওয়েবসাইটে রেজাল্ট আপ করে না। তাই দেখে ঘরে বসে আর অপেক্ষা না করে স্কুলের নোটিশ বোর্ড দেখতে যাই। তাদের নোটিশ বোর্ড হচ্ছে গেটের বাইরের দেয়াল। দেয়ালের যে পাশ থেকে রেজাল্ট প্রকাশিত করেছে গেলাম সে পাশে আর মনে মনে ভাবছিলাম এই এত এত নাম্বারের ভিড়ে কীভাবে খুঁজে পাবো নুহার অ্যাপ্লিকেশন আইডি? একটা সার্চ অপশন থাকলে ভালো হতো। :p যাই হোক, আইডি খুঁজে পেতে খুব কষ্ট হলো না আমার মাইক্রোস্কপিক চোখ দিয়ে খুঁজেছিলাম তো তাই! কিন্তু পেয়েও লাভ হলো না, আইডি একই হলেও নামটা ভিন্ন। মনটা খারাপ করে ঘুরতে না ঘুরতেই দারোয়ান গলা ছেড়ে বলছিল Day Shift Result এইদিকে। তখন আবার গেলাম সেখানে গিয়ে নুহার আইডিকে পেলাম প্রথম পাতাতেই। যাক আলহামদুলিল্লাহ্‌ প্রাথমিক বাছাইয়ে আবেদন টিকেছে এই বলে বাড়ি ফিরে এলাম।

এরপর গত ৯ জানুয়ারি লটারির তারিখ ও সময়সূচী জানিয়ে দেয়। নুহা যেহেতু Day Shift-এ তো ওর লটারির তারিখ পড়ে ১২ জানুয়ারি। এরপর দেখতে দেখতে টেনশন করতে করতে আজ ১২ জানুয়ারি চলে এলো। সকাল ৮ঃ৩০ মিনিট থেকে ১২ঃ০০ টা পর্যন্ত লটারি অনুষ্ঠিত হবে ফেইসবুক লাইভে ও ইউটিউবে। তো সকালে ঘুম থেকে ল্যাপটপটা ওপেন করে একদম আয়োজন করে খাতা কলম নিয়ে বসলাম। প্রচণ্ড উৎকণ্ঠা নিয়ে লটারি পরীক্ষা দেখছিলাম। আর ভাবছিলাম কী আছে আমাদের ভাগ্যে? প্রথমেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা দিয়ে শুরু হলো যেখানে তাদের নির্বাচিত ছাত্রী সংখ্যা মাত্র ১৪ জন। এরপর শুরু হলো বোনের কোটা সেখানে নির্বাচিত ছাত্রী সংখ্যা ৪০ জন। এটা শেষ হতেই শুরু হলো কাঙ্খিত ক্যাচমেন্ট কোটার ফলাফল ঘোষণা। কলম দিয়ে নাম্বারগুলা লিখছিলাম কিন্তু ঠিকঠাক যেন লিখতে পারছিলাম না অবশ লাগছিল। আমার পেছনে ভাবী দাঁড়িয়ে দেখছিল। আমি ওর দিকেও তাকাই না। শুধু ভাবছি ১০৯ কীভাবে মিলবে? কীভাবে সম্ভব এই ১০৯ মেলানো যেখানে তিন তিন জন আলাদা মানুষ নাম্বার পিক করছে না দেখে। দেখতে দেখতে ১৩২ জনের মধ্যে ৬০ পার হয়ে গেল, এর মধ্যে কতবার ইনভ্যালিড নাম্বার উঠে, সেইম নাম্বার পুনরায় উঠে, ১০৬ উঠে, ১০২ উঠে, ১০৭ উঠে কিন্তু ১০৯ উঠে না। উফ্‌স! আর পারি না। তারপর ঠিক ৬৮ নাম্বার পার হয়ে ৬৯ নাম্বারে গিয়ে বহুল কাঙ্খিত ১০৯ স্ক্রিনে ভেসে উঠলো। আমিও স্ক্রিনশটটা নিয়ে নিলাম। আশা পূর্ণ হলো।


সেই তিনবছর বয়স থেকে নুহাকে কেউ জিজ্ঞেস করলেই বলতো- আমি ভিকারুননিসা নূন স্কুলে পড়ি। আজ সত্যিই সে পড়তে যাবে। আমি তাঁর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।

No comments

Powered by Blogger.