পিএইচডির প্রথম দিন— ইউনিভার্সিটি অভ লিমেরিক

চৌদ্দ নভেম্বর, দুই হাজার বাইশ। আমি ঐ বাসা (আগের পোস্ট দেখুন) থেকে সকাল বেলা বাসে করে ইউনিভার্সিটিতে যাই। যে বাসায় থাকতাম ঐ বাসায় আরেকজন ইন্ডিয়ান পিএইচডি স্টুডেন্ট ছিল এবং আমার ভার্সিটিতেই পড়ে।যেহেতু পথ-ঘাট চিনি না তো তাঁর সাথেই বের হই। আর ইউনিভার্সিটি থেকে আমাকে আগেই ইমেইল করে বলছিল যে চতুর্থ বর্ষের এক পিএইচডি ছাত্রী আমাকে রিসিভ করবে। আমি যেন ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার আগে তার সাথে যোগাযোগ করে যাই। সেই কথা অনুযায়ীই আমি ঐ মেয়ের সাথে যোগাযোগ  করি এবং সে আমাকে টমাস স্ট্যাচুর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে বলে। পাশাপাশি তাঁর নিজের চেহারার বর্ণনাও দিয়ে রাখে। তারপর আমার এক কলিগ তহিবও চলে আসে আমার অফিসের বিল্ডিংএর সামনে। তারপর তহিবের সাথেই থমাস স্ট্যাচুর সামনে যাই। একটু পরই সারা চলে আসে। 

তারপর সারার সাথে ডিপার্টমেন্টে যাই এবং সারা সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর জেমস যিনি আমার ফাইনাল ইন্টার্ভিউ নিয়েছিলেন তাঁর সাথে আমার সিঁড়িতে দেখা হয়ে যায়। হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলো এবং জিজ্ঞেস করলো ফ্লাইট কেমন ছিল, কোথায় উঠেছি ইত্যাদি। তারপর সারা আমার ডেস্ক দেখিয়ে দিল এবং আমার সেই বহুল কাঙ্ক্ষিত ম্যাকবুক প্রো বক্স, একটা ওয়াটার বোতল, একটা ডায়েরী, একটা কলম হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল। এবার শুরু হলো আমার ম্যাকবুক আনবক্সিং-এর পালা। প্রিয় পাঠক, আমি আসলে খুবই আবেগপ্রবণ একজন মানুষ। এত কিছু দেখে সত্যিই সেদিন কান্না সংবরণ করা আমার জন্যে কঠিন হয়ে পড়েছিল। কিছুক্ষণের জন্যে ভুলেই গেলাম কত পথ, সমুদ্র, পর্বত ডিঙ্গিয়ে আমি আজ এই চেয়ারে বসে আছি। বাবা-মা, আপনজন সব ফেলে আমি কোথায় এসেছি? আমি ম্যাকবুক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। বিভিন্ন এঙ্গেলে কিছু ছবি নিলাম আমার ম্যাকবুকের। তারপর আমার এক কলিগ এবং সে আমার রানিং সেমিস্টারের প্রোজেক্ট মেম্বার তাঁর সাথে ঘুরে ঘুরে ডিপার্টমেন্টের এই মিটিং রুম, সেমিনার রুম, সুপারভাইজর-প্রফেসরদের রুম এবং ক্যান্টিন দেখলাম, অর্থাৎ যাদেরকে গত তিন মাস শুধু অনলাইনের মিটিং, ওয়ার্কশপ সেমিনারেই দেখেছি আজ তাদেরকে সরাসরি দেখছি। আল্লাহ শেষ পর্যন্ত আমাকে এতদূর এনেছে-- আলহামুদিল্লাহ। 



এরপর শুরু হলো ফর্মালিটিস। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। তো হাই স্ট্রীট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে সময় লাগে। প্রায় মাসখানেক, কিন্তু আমাদের দেশের বিকাশের মত একটা অ্যাকাউন্ট খোলা যায় সহজেই। যার নাম রিভোলাট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং এটা শুধু ইউরোপিয়ানদের জন্যেই। তো আমি ঐ একাউন্ট করে ডিপার্টমেন্টে। আমাকে বলা হয়েছিল যদি আমি নভেম্বর ১১ তারিখের মধ্যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নাম্বার ফাইনান্সিয়াল ডিপার্টমেন্টে না দিই, তাহলে নভেম্বরে স্যালারি পাব না। কিন্তু আমি ১১ তারিখে আকাশপথে ছিলাম। তারপর আমি সেই অ্যাকাউন্ট পাঠাই ১৬ নভেম্বর। তারপর ২১ নভেম্বর পেগ আমাকে জানায় আমি এ মাসেই স্যালারিটা পাব। এখানে স্যালারি হয় মাসের ২৫ তারিখে। 

আরও অনেক ফর্মালিটিস বাকি আছে, আমার ভিসা রিনিউ করতে হবে। সে জন্যে আয়ারল্যান্ডের ভিসা অফিসে ইমেইল করলাম সাথে অ্যাটাচ করে দিলাম, ভিসা লেটার, অফার লেটার এবং আমার পাসপোর্ট। তবে এই ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে ৩ মাস সময় লাগে। আমি আজ এই পোস্ট লিখছি প্রায় দেড় মাস পরে। কাজেই এখনও ভিসা রিনিউের কিছুই পাইনি। 

তো ক্যাম্পাসের প্রথম দিন এভাবেই সবার সাথে পরিচয় হয়ে, আমার ম্যাকবুক দেখতে দেখতে এবং ফেইসবুকে পোস্ট দিতে দিতে দিনটা কেটে গেল। আর বাড়িতে আম্মু-আব্বু-ভাইয়া-ভাবী-নুহা-সানির সাথে কথা বলেই কাটালাম। এই দিন আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিন হয়ে গাঁথা রইলো জীবন ডায়েরীতে। 

No comments

Powered by Blogger.