ইউরোপের বাসা বদল: এক সুখস্মৃতির অভিজ্ঞতা
ইউরোপে বাসা বদল মানে এক দুঃস্বপ্নের হাতছানি। এটা বাংলাদেশের মত না যে, একটি ভ্যান গাড়ি ডেকে এনে ভ্যানওয়ালাকে বলবো, এই যে আমার জিনিসপত্র, এইগুলা নতুন বাসায় পৌঁছে দিতে কত টাকা নিবেন? তো যা বলছিলাম, গত বছরে এই দুঃস্বপ্ন তিনবার আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। প্রথমে যখন ইউরোপে পা রাখি, আমার সংসার ছিল একদম বোহেমিয়ান শৈলীর — একটি মাত্র লাগেজ, একটি ব্যাকপ্যাক, এবং একটি খাবারের ব্যাগ— এই ছিল আমার সাকুল্যের সম্পদ। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে জীবনে এসেছে নতুন নতুন জিনিসপত্র, পড়াশোনার টেবিল, চেয়ার, বইপত্র, পোশাক, বেডিং, রান্নাঘর এবং ওয়াশরুমের জিনিসপত্র - কিছুই বাদ দেয়ার মত নয়। এইসব দেখে বাসা বদলের চিন্তা যখন মাথায় আসে, মনে হয় এ এক অসম্ভব কাজ।
দ্বিতীয়বার যখন বাসা বদলের পালা এসেছিল, তখনও আমার একলা সংসারের বোঝা একটু ভারীই ছিল। সেইসব সামগ্রী নিয়ে বাসে চড়ে তিন দিন ধরে ধীরে ধীরে নতুন বাসায় পৌঁছেছিলাম। তারপর ডেস্কটা পৌঁছাতে একজনের গাড়ির সাহায্য নিয়েছিলাম। তো প্রতিটি জিনিস নিজের হাতে গুছিয়ে, নতুন ঠিকানায় যাওয়া— এ কঠিনই বটে!
তবে প্রতিবারের মতো এবারও জীবনের পথে এক ভিন্ন কিছু হাজির হলো। আমার নতুন আইরিশ বাড়িওয়ালা, একজন ৮০ বৎসরের উদার মনের মানুষ। তিনি আমাকে আশ্বাস দিলেন, "তোমার জিনিসপত্র নিয়ে একটুও চিন্তা করো না। ২৬ নভেম্বর, ২০২৩, বাড়ি ভাড়ার চুক্তিনামা সমাপ্তির পর আমরা তোমার সব জিনিস নিয়ে ক্যাসেলকনেল যাব।" তার এই মানবিক উদারতা এবং সাহায্যের হাত আমাকে চিন্তামুক্ত করেছিল। তো কথা অনুযায়ী, ২৬ নভেম্বর বাড়িওয়ালা তার গাড়ি ও ট্রেলার নিয়ে এসে হাজির। আমার সব জিনিসপত্র, প্রিয় ডেস্ক ও চেয়ারটি তার ট্রেলারে করে যত্নের সাথে নতুন বাসায় পৌঁছে দিলেন।
এই ইউরোপে প্রতিবার ঠিকানা বদল এক একটি নতুন অধ্যায়, নতুন শুরু। আবারও ঠিকানা বদল করতে হবে, জানি না তখন কী ঘটবে?
No comments